
আলোকিত সকাল ডেস্ক
চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম ১১ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৮ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। চলতি জুলাই মাসের প্রথম ১১ দিনে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৫৪৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে ১৪ গুণের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এ হিসাবে রাজধানীতে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
বর্তমানে প্রতিঘণ্টায় ৫ জনের বেশি জ্বর নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় নগরীর মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ বিষয়ে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত নিতে হবে।
জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের তথ্য-উপাত্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংগ্রহ করে থাকে। বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৪৭টি হাসপাতাল থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে এর বাইরেও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে যেসব ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, তার কোনো তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে থাকে না। ফলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বেশি হয়ে থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত ব্যক্ত করেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এপ্রিল-অক্টোবরে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হওয়ায় এ মশার উপদ্রব আগেই শুরু হয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। ফলে রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগ। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে এডিস মশার বংশবিস্তার ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যাপারে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।
শিশুবিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, প্রাইভেট চেম্বারগুলোয় শিশু ডেঙ্গু রোগী অনেক পাওয়া যাচ্ছে। শিশুদের ডেঙ্গুজ্বর থেকে রক্ষায় মশারির ভেতরে রাখতে হবে; হাত-পা ঢেকে থাকে এমন টিলেঢালা জামা কাপড় পড়তে হবে এবং বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, শিশুদের জ্বর এলে অবহেলা করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, এখন যেহেতু ডেঙ্গুর মৌসুম তাই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই। ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। যারা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা দেরি করে হাসপাতালে আসছেন। অনেকে চাকচিক্য দেখে বেসরকারি হাসপাতালে বেশি যাচ্ছেন। এই বিষয়গুলো পরিহার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করছি তারা যেন মশা নিধন ব্যবস্থা আরও জোরদার করেন। নগরবাসীর প্রতি আমাদের অনুরোধ মশা যেন বংশবৃদ্ধি করতে না পারে সে জন্য বাড়ি ও বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা (শহরের বাইরে) বিভাগে ৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ জন ও খুলনা বিভাগে ১ জনসহ মোট ৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর রাজধানী ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৩০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৬২১ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ এপ্রিল বিআরবি হসপিটালে একজন, ২৯ এপ্রিল আজগর আলী হাসপাতালে একজন এবং ২৮ জুন স্কয়ার হাসপাতালে একজন চিকিৎসকসহ মোট ৩ জন ডেঙ্গুরোগী মারা যান। অবশিষ্ট ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ২ হাজার ৯২৯ জন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন। বর্তমানে ৬৮৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর সব থেকে বেশি অর্থাৎ ৪২৮ জন রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৭৩ জন, হলিফ্যামিলি হাসপাতালে ২৭৪ জন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ২৬০ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ১৯৩ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১৮৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
আস/এসআইসু